একই পরিবারের ৩ জনকে গলা কেটে হত্যা

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:০৩

একই পরিবারের ৩ জনকে গলা কেটে হত্যা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার গভীর রাতে জোরারগঞ্জ থানার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পারিবারিক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

নিহতরা হলেন নতুন বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা সওদাগর (৭১), তার স্ত্রী জোসনা আক্তার (৫৫) ও তাদের ছেলে আহমদ হোসেন (২৫)। তাদের হত্যায় জড়িত সন্দেহে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিহত মোস্তফা সওদাগরের বড় ছেলে সাদ্দাম (২৭) ও তার স্ত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, বুধবার গভীর রাতের কোনো একসময় তিনজনকে হত্যা করা হয়। খুনিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে তাদের হত্যা করে। খবর পেয়ে গতকাল ভোর থেকে পুলিশ ও বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করে।

জানা গেছে, তাদের বাড়িতে ডাকাতরা হামলা চালিয়েছে বলে আটক হওয়া সাদ্দাম গ্রামবাসী ও পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ডাকাতের আঘাতে তিনজন মারা গেলেও সাদ্দামের গায়ে একটি আঁচড়ও লাগেনি। একইভাবে সাদ্দামের স্ত্রী-সন্তানও অক্ষত রয়েছে। এসব দেখে ও আচার-আচরণে সন্দেহ হওয়ায় সাদ্দামকে আটক করে পুলিশ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা নিয়ে গত তিন বছর ধরে নুরুল মোস্তফার সঙ্গে তার বড় ছেলের বিরোধ চলছিল। মেজো ছেলে, স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে সম্পত্তি দিয়ে দলিল করে দেন মোস্তফা। এ নিয়েই বিরোধের শুরু।

স্থানীয় ইউপি সদস্য (৭ নম্বর ওয়ার্ড) মনির আহাম্মদ ভাসানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিহত মোস্তফা সওদাগর তার বাড়ির ১২ শতক জায়গার মধ্য থেকে মেজো ছেলে নিহত আহমদ হোসেনকে ৪ শতক জায়গা লিখে দেন। বড় ছেলে এর প্রতিবাদ করে। এছাড়া নিহত আহমদ হোসেনের আগেই ছোট ছেলে আলতাফ হোসেন পরিবারের অমতে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে। বাবা-মা ওই বিয়ে মেনে নেননি, বউকে ঘরেও তুলে নেননি। এসব নিয়ে তাদের পারিবারিক কলহ চরমে পৌঁছে।’

ভাসানী আরও বলেন, ‘আগামীকাল (আজ শুক্রবার) নিহত আহমদ হোসেনের বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারণ হওয়ার কথা ছিল। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ধুমধাম করে বিয়ে করাবেন। কারণ নিহত আহমদ হোসেন তার বাবা-মায়ের দেখভাল করত। বাবা-মা তার ওপর খুশি ছিলেন। এসব বিষয় নিয়েও বড় ছেলের সঙ্গে কলহ চলছিল।’

এক পরিবারের তিনজনকে হত্যার খবর পেয়ে গতকাল সকালে প্রথমে স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ, এরপর পিবিআই ও চট্টগ্রাম সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের ডিএনএ নমুনা ও হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মোহাম্মদ লাবিব আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, ‘আটক সাদ্দাম বাড়িতে ডাকাতির কথা জানালেও আমরা বাড়ির ভেতর ডাকাতির কোনো আলামত পাইনি। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র গুছানো ছিল। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, পারিবারিক বিরোধ বিশেষ করে সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নির্মম এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।’

জোরারগঞ্জ থানার ওসি নূর হোসেন মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিহত তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনার মোটিভ জানার চেষ্টা করছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top