দুলাল বিশ্বাসকে রাজনৈতিকভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:০৭

দুলাল বিশ্বাসকে রাজনৈতিকভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস যখন গণমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন, তখন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি কুচক্রী মহল। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় তাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এলাকার একজন সৎ, পরিচ্ছন্ন, গণমানুষের এই নেতাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না। ষড়যন্ত্র করে তাকে নির্বাচনের মাঠ থেকেও সরানো যাবে না। এ ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে সরে এসে প্রতিপক্ষকে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, শৈলকুপায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে হাবিবুর রহমান রিপন নামে এক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। রিপন মীনগ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। গত রোববার রাত ৩টার দিকে শৈলকুপা থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে আবাইপুর ওয়াপদার কাছে পৌঁছলে প্রতিপক্ষ তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহতের ভাই আহমেদুল কবির বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘উক্ত হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনায় নজরুল ইসলাম দুলাল ও তার ভাই হেলালের ষড়যন্ত্র আছে মর্মে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।’ এজাহারে নজরুল ইসলাম দুলাল ঘটনার তারিখ তার নিজ গ্রামের বাড়িতে ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম দুলাল। ঘটনার দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে প্রতিপক্ষ আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে।’

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নজরুল ইসলাম দুলাল ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পেষিত-নির্যাতিত ও কোণঠাসা অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে সমর্থন দিয়ে মাঠে নেমেছেন। গত ৫ অক্টোবর তার এলাকায় অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে দুলালের প্রতি সমর্থন জানান। আর এতেই মাথা নষ্ট হয় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের। বিপুল জনসমর্থন দেখে রাজনৈতিক মাঠে জল ঘোলা করার চেষ্টায় নেমে পড়ে প্রতিপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউপি সদস্য রিপনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর নজরুল ইসলাম দুলালকে রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে রাখতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় জড়ানোর অপচেষ্টা চলছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জাতীয় কোনো গণমাধ্যমে দুলাল বিশ্বাসের নাম আসেনি। তবে জেলার একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের মালিকানাধীন ‘দৈনিক এই আমার দেশ’ নামক পত্রিকায় তাকে জড়িয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেই পত্রিকার রিপোর্টের সূত্র ধরেই তাকে পরিকল্পনাকারী বলা হচ্ছে মামলার এজাহারে।

নেতাকর্মীরা আরও জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার রিপনের বোন মুন্নী খাতুন এ ঘটনার জন্য আবাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তার হোসেন মৃধা ও তার ছেলেকে দায়ী করেন। কিন্তু মামলায় বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুক্তার হোসেন মৃধার নাম উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি রাত ৩টায় ঘটে যাওয়া এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হলেও তাদের সঙ্গীদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ হত্যাকাণ্ডের পর ওই এলাকায় রিপনের প্রতিপক্ষদের অর্ধশত বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। নিরীহ মানুষকেও নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, ‘সামাজিক ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শৈলকুপায় আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন খুন হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম দুলালকে হেয় করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে নজরুল ইসলাম দুলাল প্রার্থী হতে চেয়েছেন, এটাই তার অপরাধ। এ ধরনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শৈলকুপায় অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। তখন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এ খুনের পর প্রতিপক্ষের তৎপরতা বেড়েছে। এভাবে মিথ্যাচার করে মূল খুনিকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে মূল খুনি বেরিয়ে আসবে। তাই সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শৈলকুপা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়ে আসছেন। কিন্তু কারও প্রতিবাদ জানানোর কোনো সাহস নেই। নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আশা-ভরসার স্থল খুঁজে পেয়েছি। এ কারণেই নজরুল ইসলাম দুলালকে যাতে রাজনীতির মাঠের বাইরে রাখা যায়, সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঠাকুর দাস মণ্ডল জানান, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। বাদী যাদের নামে মামলা দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আসামিদের মধ্যে যদি কারও সম্পৃক্ততা না পাওয়া যায়, কোনো নির্দোষ লোক যদি আসামি থাকে, তাকে বাদ দেওয়া হবে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top