ধর্ষণ, একাধিক বিয়ে এবং বিভিন্ন নারীর সাথে প্রেমের নামে প্রতারণা অর্থ আত্মসাৎ, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতনসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে

চাকরির শুরুতেই ৫ কোটি টাকার মালিক এএসপি সোহেল

চাকরির শুরুতেই ৫ কোটি টাকার মালিক এএসপি সোহেল

পাঁচ বছরের চাকরি জীবনের প্রথম ৩ বছরেরও কম সময়ে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ গড়েছেন। এরমধ্যে সাড়ে তিন কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগও করেছেন। বাকি দেড় কোটির বেশি টাকা রয়েছে নগদ ও ব্যাংক হিসাবে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নিয়েছেন আড়াই কাঠা জমি। এই বিপুল সম্পদের মালিক কুড়িগ্রামের রৌমারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. সোহেল উদ্দিন। এর বাইরেও তার রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অলঙ্কারাদি।

এই সম্পদ গড়তে অর্থ আত্মসাৎসহ পদে পদে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখানেই থেমে থাকেননি। আগের বিয়ে গোপন করে করেছেন দ্বিতীয় বিয়ে। আবার দ্বিতীয় বিয়ে গোপন রেখে জড়িয়েছেন একাধিক অবৈধ সম্পর্কে।

তাদের থেকেও হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। পুলিশ সদর দপ্তরে এএসপি সোহেলের বিরুদ্ধে দেওয়া এক নারী বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তার অভিযোগের সূত্র ধরে যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।

তবে তার প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে ধারণা তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠজনদের। জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ২২ হাজার টাকা স্কেলে চাকরিতে যোগদান করেন সোহেল (বিপি নং-৮৭১৮২২০৫৭৮)।

সব ঠিক থাকলে বিসিএস পুলিশের ৩৬ ব্যাচের এই কর্মকর্তার আরও ২৩ বছর চাকরিতে থাকার কথা। অথচ পাঁচ বছরে অপরাধ-অনিয়মের অভিযোগের পাহাড় জমেছে তার বিরুদ্ধে। নবম গ্রেডে ২৮ হাজার ১০০ টাকা স্কেলে বর্তমানে তিনি সাকুল্যে ৪৫ হাজার টাকার মতো বেতন পান।

সবমিলিয়ে চাকরির পুরো সময়ে বেতন বাবদ তিনি ২৭ লাখের মতো আয় করেছেন। তার মৃত পিতা মো. হাবিবউল্যা পাটোয়ারীরও উল্লেখযোগ্য সম্পদ ছিল না। সোহেলের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মনতলায় গিয়ে দেখা গেছে, তাদের পৈতৃক ভিটায় আধাপাকা জীর্ণশীর্ণ একটি পুরোনো ঘর রয়েছে।

তাহলে চাকরির প্রথম ৩ বছরেই কীভাবে এত সম্পদ গড়লেন-এ নিয়ে পরিচিতজনদের মধ্যেও রয়েছে তুমুল আলোচনা। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমেই মোট সম্পদের অধিকাংশের মালিক হয়েছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ চারটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলার একটিতে তার বিরুদ্ধে গত বছরের ১০ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে আদালত। বাকি তিনটি তদন্ত করছে পিবিআই।

পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছেও তার বিরুদ্ধে অন্তত চারটি অভিযোগপত্র জমা হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারসহ পুলিশের অন্তত সাতটি পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিক তদন্তও চলমান। কিন্তু বছর পেরুলেও এই এএসপির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু তাকে গত বছরের ২৭ নভেম্বর এপিবিএন থেকে কুড়িগ্রামের রৌমারী সার্কেলে পদায়ন করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় এবং চাকরিতে বহাল থাকায় তিনি মামলার তদন্ত ও বিভাগীয় তদন্তে প্রভাব বিস্তার করছেন। হয়রানি করছেন সাক্ষীদের।

এসব বিষয়ে জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) খন্দকার লুৎফুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড (ডিঅ্যান্ডপিএস) এর অতিরিক্ত ডিআইজির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিঅ্যান্ডপিএস) বেলাল উদ্দিন এ বিষয়ে এআইজি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান  বলেন, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে সেটি সম্পর্কে তদন্ত হয়। এটিও তদন্তের পর্যায়ে আছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোথায় কত সম্পদ : অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এএসপি সোহেলের মোট সম্পদ সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি। এই হিসাব পৈতৃক কৃষি সম্পত্তি ও অলঙ্কারাদির বাইরে।

মোট সাড়ে ৫ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মধ্যে ৬৯ লাখ ৭০ হাজার ২৬৫ টাকা শেয়ার/ডিবেঞ্চারে (ঋণপত্র) বিনিয়োগ করেন তিনি। এছাড়া সঞ্চয়পত্র/ইউনিট সার্টিফিকেট/বন্ডে ২০ লাখ টাকা, প্রাইজ বন্ড/সঞ্চয় স্কিমে ২০ লাখ টাকা এবং বিভিন্ন খাতে আরও আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।

মোট টাকা থেকে ঋণ প্রদান করেন সাড়ে চার লাখ টাকা। তবে মোট সম্পদের মধ্যে তার দায় রয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকারও বেশি। ২০২১-২২ কর বর্ষের রিটার্নে তিনি এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন। মোট দায়ের এই অর্থ নিয়েও নয়ছয় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রূপগঞ্জে আড়াই কাঠা জমি : বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটির (পিওএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এএসপি সোহেল যৌথ মালিকানায় পুলিশ অফিসার্স সমবায় সমিতি-৩ এর অধীনে ২০ কাঠা জমি গ্রহণ করেছেন।

এর মধ্যে তার নামে রয়েছে আড়াই কাঠা জমি। বাকি সাড়ে ১৭ কাঠা জমি মোসা. রানী নামের এক নারীর নামে। এই জমির মোট মূল্য ২ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সমিতিতে সোহেলের সদস্য নম্বর-১২৮৬।

এই নম্বরের বিপরীতে কিস্তির মাধ্যমে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে টাকাগুলো পরিশোধ করা হচ্ছিল। কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে তার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৯১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭০ টাকা প্রদানের তথ্য পাওয়া গেছে।

যৌথ মালিকানায় থাকা নারীর বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, মোসা. রানী এএসপি সোহেলের ব্যাচের এক নারী ক্যাডার কর্মকর্তার মা। পরে ওই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাদের দুজনের বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়।

এরপর তার মা রানীর সঙ্গে জমি কেনার কথা বলে তাদের পরিবার থেকে দুই দফায় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা নেন সোহেল। এই জমির কিস্তির অংশ হিসাবে আরও ১১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দেওয়া হয় সোহেলকে। তবে বেশিরভাগ কিস্তিই তিনি পরিশোধ না করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসপি মো. সোহেল উদ্দিন  বলেন, বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া, অর্থ আত্মসাৎ, যৌতুক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ যে অভিযোগগুলো এসেছে তার কোনোটিই সত্য নয়।

তার ব্যাচের নারী ক্যাডার কর্মকর্তা তাকে ফাঁসাতে এই অভিযোগগুলো করেছেন। যিনি একসময় তার বন্ধু ছিলেন। ওই নারী স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিভিন্ন স্থানে তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এবং সঞ্চয়পত্র ইস্যু করেছেন।

জমি ক্রয়ের প্রক্রিয়ায়ও একইভাবে জালিয়াতি করেছেন। অর্থ আত্মসাতের মামলায় উল্লিখিত আয়কর রিটার্নের হিসাবও সঠিক নয়। স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির ঘটনায় তিনিও একটি মামলা করেছেন।

এ নিয়ে ওই নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনিও অভিযোগ করেছেন। এছাড়া সম্পর্কে প্রতারণার কারণে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেন বলে জানান তিনি।

অর্থ আত্মসাতের কৌশল : সোহেল কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন ও মামলার নথি থেকে, যারা তার কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে প্রতিকারের জন্য এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

এমন তিনজনের সঙ্গে কথা হয় । তাদের অভিযোগ, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে সোহেল অবৈধভাবে এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এক্ষেত্রে তার মূল টার্গেট ছিলেন নারীরা।

অবিবাহিত পরিচয়ে ভুক্তভোগী কাউকে বিয়ে করে অথবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের অর্থ। বিশ্বস্ততা অর্জনে এদের কাউকে আবার তিনি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও সঞ্চয়পত্রে নমিনিও করেছেন।

এরমধ্যে রয়েছে ঢাকার সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট নং ০১০২৫১২৪; ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ইস্যুকৃত মোট ২৫ লাখ টাকার তিনটি সঞ্চয়পত্র যথাক্রমে নং-১৩৬১৪৬৬৪, ১৩৬১৬৫৬ ও ১৩৬১১২০।

এছাড়া সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে এক নারীর সঙ্গে তার একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যার নম্বর-০১০২৫১২৩। এএসপি সোহেল একেক স্থানে আবার একেক ধরনের স্বাক্ষর করেছেন।

অনুসন্ধানে তার সঞ্চয়পত্র, পাসপোর্ট ও কর্মস্থলসহ বিভিন্ন জায়গায় মোট সাত ধরনের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। এছাড়া একাধিক নারীকে একই রং ও ডিজাইনের পোশাক উপহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্বস্ততা অর্জনে মালিবাগের পাবনা কলোনিতে এক নারীর সঙ্গে মিলে তিনি একটি বাসাও ভাড়া নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবরের পিওএইচএস’র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এই প্রকল্পের জমি পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের আত্মীয়রা নিতে পারবে। কিন্তু আত্মীয় না হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বস্ততা অর্জনে নারী কর্মকর্তার মাকে ‘আন্টি’ পরিচয় দিয়ে সেখানে যুক্ত করেন তিনি।

একজন থেকেই নেন ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা! অনুসন্ধানে জানা যায়, এএসপি সোহেল তার এক নারী ব্যাচমেটের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ওই নারী কর্মকর্তা ও তার পরিবার থেকে হাতিয়ে নেন বিপুল পরিমাণের অর্থ ও সম্পদ।

সোহেলের বিরুদ্ধে নগদ, পণ্যসামগ্রী, ব্যাংকিং চ্যানেল ও স্বর্ণ নেওয়ার মাধ্যমে ৩ কোটি ৩২ লাখ ১১ হাজার ২২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন ওই নারী। এরমধ্যে ২০২১-২২ করবর্ষের রিটার্নে সোহেল ২ কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ১৬৭ টাকা গ্রহণের তথ্য স্বীকারও করেছেন।

এ ঘটনায় গত বছরের ২৩ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৪০৬, ৪২০ ও ৫০৬ ধারায় অর্থ আত্মসাতের একটি মামলাও হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যার উদ্দেশে মারধর করে গুরুতর জখমসহ নানা অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ও শাহজাহানপুর থানায় আরও দুটি মামলা করেন ওই নারী কর্মকর্তা। এছাড়া সোহেলের শাস্তি চেয়ে জননিরাপত্তা সচিব ও আইজিপিসহ বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার চাকরির স্বল্প সময়ে এত বিশাল সম্পদের মালিক হওয়া অস্বাভাবিক।

এর পেছনে নিশ্চয়ই বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আয়ের একটা সম্পর্ক আছে। কাজেই নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় পুলিশের উচিত তাকে জবাবদিহির আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

তাছাড়া পুলিশের বিভাগীয় তদন্তের বাইরেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি খতিয়ে দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। যত বড় কর্মকর্তাই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব দেওয়ানি বা ফৌজদারি অভিযোগ আদালতের নজরে আনা প্রয়োজন।

নগদ অর্থই নয়, নেন ব্যবহার্য জিনিসপত্রও : এএসপি সোহেল শুধু নগদ অর্থ আত্মসাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। বরং ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র নেন বিভিন্নজন থেকে।

তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার নথি, বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের রশিদ, বিভিন্ন স্থানে দেওয়া অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। যেখানে দেখা যায়, প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ের প্রস্তুতি হিসাবে এক নারী কর্মকর্তা ৯১ হাজার টাকার এসি, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার হিটাচি ফ্রিজ কিনে দেন তাকে। এরপর ওই কর্মকর্তার থেকে সোহেল ১ লাখ সাড়ে ১৪ হাজার টাকা মূল্যের আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের রাডো ঘড়ি, ২৬ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের আংটি, সাড়ে ৫২ হাজার টাকায় হোমটেক্সের পর্দাসহ ২৫ লাখ টাকা মূল্যমানের পণ্য ও অন্যান্য আসবাবপত্র নেন।

২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পণ্যগুলো নেন। শুধু তাই নয়, সোহেলের চাঁদপুরের বাড়িসংলগ্ন জমি কিনতে নেন ৪৮ লাখ টাকা। অর্থ আত্মসাতের মামলায় বলা হয়, জমি ক্রয় বাবদ নেওয়া অর্থের কথা হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের মাধ্যমে তিনি স্বীকারও করেছেন। এছাড়া ২০২০ সালে আরও ১ লাখ সাড়ে ২২ হাজার টাকা নেন সোহেল।

৩৬তম বিসিএসের ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা  বলেন, দুজনের বিয়ের কথা চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ। সোহেলের বোনের বিয়ে, বাবার মৃত্যুর অনুষ্ঠান, মালিবাগের বাসার ভাড়া ও অন্যান্য বিল বাবদ লাখ লাখ টাকা নেন।

ফ্ল্যাট কেনার জন্য মায়ের ১৫৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নেয়। আমার থেকে টাকা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপঢৌকনও দেয় সে। একদিকে সে হবু স্ত্রী হিসাবে আমার সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে।

অন্যদিকে পুলিশের এসআই পদের এক জুনিয়র নারী কর্মকর্তাসহ অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চালিয়ে গেছে। বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়লে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপি) কর্মরত ফেনীর ছাগলনাইয়ার ওই নারী এসআইসহ (৩৭তম ব্যাচের ক্যাডেট) আমাকে হত্যার চেষ্টা করেন।

ওই নারী কর্মকর্তার কথার সূত্র ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে যোগাযোগ করা হয়। সেখানে সেদিন (২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি) পা, মুখমণ্ডল ও বুকে জখম, ফোলা ও স্ক্র্যাচ চিহ্ন নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই কর্মকর্তার চিকিৎসা গ্রহণের তথ্য পাওয়া যায়।

এর রেজিস্ট্রেশন নং-ডিএমসিএইচ ১৬১৯৯১ ও রেফারেন্স নং-১৫১/২। একটি কক্ষে ওই নারী এসআইয়ের সঙ্গে এএসপি সোহেলের হাস্যোজ্জ্বল অবস্থানের ছবিও এসেছে আমাদের  হাতে। সূত্র জানায়, অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গত বছরের ১৩ মার্চ ও ১৯ মে তারিখ দুই দফায় সিএমপি কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী সহকারী কমিশনার। এসআইয়ের বিরুদ্ধেও মামলা চলমান।

দ্বিতীয় স্ত্রীকে ১৯ দিনে তালাক : রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেম বাগান কাজী অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সোহেলের প্রথম বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শাহিনবাগের ওই নারীর সঙ্গে ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

পরিচিত মহলে এই বিয়ের কথা গোপন রেখেছিলেন তিনি। অন্যদিকে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজের পার্শ্ববর্তী কাজী অফিসের তথ্য বলছে, বিচ্ছেদের বছরের ৩০ এপ্রিল বগুড়ার গাবতলীর এক নারীকে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন তিনি।

১৯ দিনের মাথায় সেই নারীকেও তালাকের নোটিশ পাঠান। ভুক্তভোগী নারী এ ঘটনায় গত বছরের ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন। ওই নারী যুগান্তরকে জানান, প্রাইভেট কার ও ডায়মন্ড রিং কেনার জন্য ২৫ লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছিলেন এএসপি সোহেল।

এরপর তারা সোহেলকে সাড়ে ৮৯ হাজার টাকা দিয়ে রিং ও নগদ ৩ লাখ টাকাও দেন। কিন্তু পুরো অর্থ না দেওয়াতে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে সোহেলের তালাকের নোটিশ পাঠানোর কথা জানতে পারি।

কিন্তু সেটি করা হয় পোস্ট অফিসে জালিয়াতির মাধ্যমে। ফলে তিনি নোটিশও হাতে পাননি। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে গত বছরের ৩০ নভেম্বর ও ২৯ ডিসেম্বর আইজিপি বরাবর দুটি অভিযোগ দেন তিনি।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top