যশোর ৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর)
ঋণখেলাপীর অভিযোগে প্রার্থীতা বাতিল হতে পারে এনামুলের!
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর ৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের নৌকার প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।এর ফলে তার প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
অনুসনন্ধানে জানা যায়, যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুল একজন ব্যবসায়ী। অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় মেসার্স রুমন ট্রেডার্স নামে তার মালিকাধীন একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। ২০০১ সালের শেষের দিকে ওই প্রতিষ্ঠানে সার, সিমেন্ট, খাদ্য, পোল্ট্রি ফিড ব্যবসা পরিচালনার জন্য জনতা ব্যাংকের নওয়াপাড়া শাখা থেকে সিসি (হাইপো) ঋণ হিসেবে ২৫ লাখ টাকা ও সিসি (প্লেজ) ঋণ হিসেবে আরও ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে কয়েক মেয়াদে ওই ঋণ বৃদ্ধি হতে থাকে। একপর্যায়ে ওই ঋণ এবং এলসি মিলে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঋণের পরিমাণ হয় ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ওই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ছিল ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। এরপরেও ঋণ পুনঃতফসিল হয়। একপর্যায়ে ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত একাধিকবার ঋণ পরিশোধের দাপ্তরিক নোটিশ নেয়। এছাড়া ২০১৩ সালের ৩ মার্চ ব্যাংকের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়।
তবে কোনকিছুতে ঋণ আদায় না হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঋণ গ্রহিতা প্রতিষ্ঠান, মালিকসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। ওই মামলা চলাকালে আদালতের নির্দেশে দুই দফায় মর্টগেজ দেওয়া সম্পত্তির নিলামের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ওই মামলাটি বর্তমানে যশোর অর্থঋণ আদালতে চলমান আছে। যার নং (০৬/১৭)। জনতা ব্যাংক বাদী হয়ে এই মামলা দায়েরকালে পাওনা ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছিল ২১ কোটি ৭২ লাখ ৪৪ হাজার ৮ টাকা। ওই মামলার সর্বশেষ আদালতে হাজিরা ছিল গত ২০ আগস্ট। এছাড়াও আগামী হাজিরার তারিখ ০৪ জানুয়ারি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এনামুল হক বাবুল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দিনই (২৬ নভেম্বর) সিআইবিতে প্রদর্শিত রিপোর্টের উপ হাইকোর্ট বিভাগে ব্যাংকের বিরুদ্ধে এফ টি এম এ টি দায়ের করেছেন। (যার নম্বর ৪০৭/২০২৩)। এমন তথ্য সংযুক্ত করে ওইদিনই জনতা ব্যাংকের নওয়াপাড়া কর্পোরেট শাখা হতে ব্যাংকটির উপমহাব্যবস্থাপক (সিআইবি) বরাবর পত্র পাঠানো হয়েছে (স্মারক নম্বরঃ এমআইএইচএস/সিআইবি/ রুম্মন ট্রেডার্স / ৪৮৪/২০২৩)। জনতা ব্যাংকের নওয়াপাড়া শাখার সহকারি মহাব্যবস্থাপক ইমরান হোসেনের পাঠানো পত্রে বলা হয়েছে, 'অত্র শাখার ঋণ খেলাপী গ্রাহক মেসার্স রুম্মন ট্রেডার্সের প্রোপাইটর এনামুল হক বাবুল সিআইবি বারকোড অনুযায়ী সিআইবিতে প্রদর্শিত তথ্যের মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিতাদেশ অবহিত
করেছেন। যার সিআইবি বারকোড-৭৮৪৮৪২। ওই পত্রের নিচের অংশে, এনামুল হক বাবুলকে ঋণ খেলাপী হবে গ্রাহক হিসেবে সম্ভোদন করে বলা হয়, তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়াও স্থগিতআদেশের বিষয়টি অবহিত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা। তবে মহামান্য হাইকোর্টে কি কারণ দেখিয়ে সিআইবি রিপোর্ট প্রদর্শনের স্থগিতআদেশ আবেদন করেছিলেন সেটা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বিষয়টিকে বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদ ১ ধারার পরিপন্থী দাবি করেছেন এই আসনে একটি রাজনৈতিক দল থেকে মনোনীত প্রার্থী। তিনি বলেন, আইনে বলা হয়েছে- কোন ব্যক্তি কৃষি কাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ ব্যতীত, মনোনয়ন জমা দেওয়ার তারিখের পূর্বে কোন ব্যাংক হতে গৃহীত কোন ঋণ বা ঋণের কোন কিস্তি পরিশোধে খেলাপী হয়ে থাকলে, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবার ক্ষেত্রে অযোগ্য হইবে। একই অনুচ্ছেদের ১ ধারার উপ-ধারা (এম) বলা হয়েছে- কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন কোম্পানীর পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হন যা কোন ব্যাংক হতে গৃহীত কোন ঋণ বা ঋণের কোন কিস্তি তার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখের পূর্বে পরিশোধে খেলাপী হয়েছে, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হইবে। ওই প্রার্থী আরও বলেন, আমরা অন্য প্রার্থীরা আশা করছি আইন মেনেই সবার ক্ষেত্রে সমান প্রয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে ছোট দল-বড় দল বিবেচনা করবে না কমিশন। তারপরও রোববার সকল তথ্য প্রমাণসহ আমরা কমিশনে দিব।
এ বিষয়ে যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুল সাংবাদিকদের বলেন, 'সকল আইন-কানুন মেনেই মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছি। আমার সব কাগজপত্রই সঠিক। না জেনে বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জনতা ব্যাংকের নওয়াপাড়া শাখার সহকারি মহাব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ প্রসঙ্গে তিনি কোন ধরণের মন্তব্য করতে পারবেন না। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। যশোরের সিনিয়ন নির্বাচন কর্মকর্তা আনিচুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকসহ
অন্যান্য সংস্থাগুলোকে এসব বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ইতিপূর্বেই চিঠি দেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের অধীনে বিষয়গুলো নিয়ে আগামীকাল (আজ রোববার) আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সাথে বসবো। তাদের দেয়া তথ্যর ভিত্তিতেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপি'র চার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছিল উচ্চ আদালত। ঋণখেলাপীর অভিযোগ এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ বহাল রেখেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: