159

05/04/2024 নৌকার বিপর্যয়ের মূল কারণ মনোনয়ন বাণিজ্য!

নৌকার বিপর্যয়ের মূল কারণ মনোনয়ন বাণিজ্য!

বিএম শাহ আলম

১৫ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৫৯

প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ১ হাজার ১৯৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলীয় বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কাছে ৪২৪ ইউপিতে পরাজিত হয়েছেন। অনেক ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামানতও হারিয়েছেন। ১৩১ ইউপিতে প্রতিযোগিতা করতে পারেননি, এমনকি দ্বিতীয়-তৃতীয় অবস্থানেও ছিলেন না আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৮৯.৭৬ শতাংশ। সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে ৪২.২৮ শতাংশ। গড় ভোট পড়েছে ৭৩.৪৯ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইউপির দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশই পরাজিত হয়েছেন। যদিও প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ বিজয়ী হয়েছিলেন। আর ওই ধাপে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন ২৪.২২ শতাংশ ইউপিতে।

এই যখন অবস্থা, তখন একে স্থানীয় কোন্দল বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের কথা ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। অনেকেই অবশ্য বলার চেষ্টা করছেন যে, যারা জিতেছে তারাও তো নৌকারই লোক। কিন্তু এ যে অক্ষমের সান্ত্বনা—তা বলাই বাহুল্য। কারণ যারা জিতেছে তারা নৌকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই জিতেছে। তাদের মার্কা আর যাই হোক, নৌকা নয়। তাই তাদের 'নৌকার লোক' বলে চালিয়ে দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মনে রাখা দরকার, সেই ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তদানীন্তন আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে যে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিল, তখন থেকেই এ দেশের মানুষের কাছে 'আওয়ামী লীগ' ও 'নৌকা' এই দুটো শব্দ প্রায় সমার্থক হয়ে আছে। অবস্থাটা এমনই যে, গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ পর্যন্ত মনে করেন আওয়ামী লীগ মানেই নৌকা আর নৌকা মানেই আওয়ামী লীগ। তাই হয়তো আওয়ামী লীগ সমর্থকরা গর্ব করে বলে থাকেন 'আমি নৌকার লোক'। তাই যদি হবে, তাহলে নৌকার এমন বিপর্যয় কেন? এটা কি কেবলই সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের ফল, নাকি আরও অধিক কিছু?

এবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মনোনয়ন বাণিজ্য তথা টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। অনেক প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করে দলীয় মনোনয়ন নিচ্ছেন। এসব কারণে যোগ্য ও সঠিক ব্যক্তিরা স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তাই ভোটারদের প্রার্থী পছন্দ না হওয়ার কারণেই অনেক ক্ষেত্রে নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এর প্রমাণ  মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যানপদে মাত্র তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও নয়টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, বঙ্গবন্ধুর জন্মজেলা গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে ৭টির মধ্যে ৬টিতেই নৌকা হেরে গেছে। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতে নৌকার ভরা ডুবিতে  নৌকার মনোনয়ন বাণিজ্যেকেই দায়ী করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন নৌকার মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে অযোগ্য লোককে নৌকার মাঝি করা হয়েছিল যে কারণে এমন ভরাডুবি।

কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য তহমিনা সিদ্দীকা মনে করেন, এ রায় মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জন বিস্ফোরণ হিসাবে দেখছেন। তিনি বলেন, নৌকা বা আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়নি। পরাজয় হয়েছে মনোনয়ন বাণিজ্যের। যারা মনোনয়ন পেয়েছে তারাও এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে টাকা দিয়েছে এই কারণে জনগণ মনোনয়নের বিরুদ্ধে তাদের রায় দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ করেন। কালকিনিতে দলীয় বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে যারাই নির্বাচন করেছেন তাদের সবার কাছ থেকেই সেই প্রবাবশালী ব্যক্তি টাকা নিয়েছিলেন। যোগ্য হোক আর অযোগ্য হোক যে বেশি দিয়েছে তাকেই নৌকার টিকিট দেওয়া হয়েছে। আর জনগণ সেটা বুঝেই রায় দিয়েছে। এই চিত্র এখন সারাদেশে।

আমি মনে করি কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য তহমিনা সিদ্দীকার কথা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হোক,মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হোক, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা গর্ব করে বলুক 'আমি নৌকার লোক'।

বিএম শাহ আলম
নির্বাহী সম্পাদক,দৈনিক আমাদের দিন

সম্পাদক:
যোগাযোগ: ৩২/২, প্রিতম জামান টাওয়ার, (১১ তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা - ১০০০
মোবাইল: +৮৮ ০১৭৮৭ ৩১৫ ৯১৬
ইমেইল: infobanglareport@gmail.com