353

04/20/2024 রাষ্ট্রপতি পদে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার!

রাষ্ট্রপতি পদে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার!

শাহ আলম,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১৩

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে এই পদে মনোনয়নের জন্য পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের পক্ষে মত আসার পর এই নাম যুক্ত হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে এবং সাতবারের সংসদ সদস্য।

এত দিন রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, দলের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নাম শোনা গেছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকের পর যুক্ত হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ফিজার দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য গত বৃহস্পতিবার  বলেন, বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিবিদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো হয়। পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যিনি দলের প্রতি, দেশের প্রতি, শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, এমন রাজনীতিবিদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। রাষ্ট্রপতি সাহস ও মনোবলের সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন। তাই রাষ্ট্রপতি এমন একজনকে হতে হবে, যিনি জনপ্রিয় এবং সাহস ও মনোবলসম্পন্ন। যেকোনো পরিস্থিতি বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, সংসদীয় দলের ওই বৈঠকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি হামিদের ভূমিকাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনার মত আসে। পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মনোনয়ন পান, এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা একমত। এর পরই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ফিজারের নাম প্রথম দিকে চলে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য ও সংসদ সদস্য বলেন, ফিজার সাবেক মন্ত্রী, সাতবারের এমপি। তাঁকে নিয়ে কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মাঠে আলোচনা আছে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি চমক দেবেন। ফিজার হতে পারেন সেই চমক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক সূত্রে বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মধ্যে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম আসে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

কে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার?

মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৫৩ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের নাম জামগ্রাম। বাবা মোবারক হোসেন এবং মা শাহেদা খাতুন। রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি “ফিজার” নামেই সমধিক পরিচিত।
মোস্তাফিজুর রহমান ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং এগারো দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

তার দর্শন এবং উদ্দেশ্যের প্রতি গভীর দায়িত্বশীলতার কারণে, তিনি কৃতিত্বের সাথে সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং ফুলবাড়ি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মোস্তাফিজুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা (এফ.এফ) হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, এবং সেক্টর-৭ এর অধীনে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে লড়াই করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে তিনি দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর ১৯৭৩ সালে তিনি ফুলবাড়ি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭০ সালে কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ফুলবাড়ী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জি.এস ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ১৯৮৬ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একজন অত্যন্ত প্রবীণ এবং অক্লান্ত কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য হন এবং দলের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ফুলবাড়ি থানা আওয়ামী লীগ এর- সাংগঠনিক সম্পাদকও নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে তিনি দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে তিনি কাউন্সিলের মাধ্যমে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বগুণে তিনি পরপর তিনবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সালে কাউন্সিলে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং অদ্যাবধী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।

তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং সে কারণে ১৩ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে তাঁকে সেনা হেফাজতে নিয়ে একমাস আটক রাখা হয়।

গনতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য তাঁকে ১৯৯০ সালে জেলে প্রেরণ করা হয়। জনাব মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মত নির্বাচনী এলাকা ১০, দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ি- পার্বতীপুর) থেকে জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একাদিক্রমে আরও পাঁচবার (১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৩ এবং ২০১৮) তিনি মাননীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম এবং সাহসী নেতৃত্বের গুণে জনগণ তাঁকে পরপর সাতবার এই পদে নির্বাচিত করে। তিনি ২০০৯ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ও দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই ২০০৯ থেকে ২১ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৫ বছর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এবং ১০ বছর পাবলিক অ্যাকাউন্টস্‌ কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।

অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান জাতিসংঘের ৫৪তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, জার্মানী, ভারত, মালয়েশিয়া এবং ইউএসএ সহ বিভিন্ন দেশে কর্মশালা এবং সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৭৯ সালে রাজিনা রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ফারহানা রহমান এবং ফারজানা রহমান নামে দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।

রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রত্যাহার ১৪ ফেব্রুয়ারি। সংসদ ভবনে ভোট গ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে ভোটের প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনেই একক প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের পর মাত্র একবার একাধিক প্রার্থী থাকায় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। সেটা ১৯৯১ সালে। সেবার ক্ষমতাসীন বিএনপির পাশাপাশি তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল।

সম্পাদক:
যোগাযোগ: ৩২/২, প্রিতম জামান টাওয়ার, (১১ তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা - ১০০০
মোবাইল: +৮৮ ০১৭৮৭ ৩১৫ ৯১৬
ইমেইল: infobanglareport@gmail.com