অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মনিপুর স্কুল ও কলেজ
রাজধানীর মনিপুরে অবস্থিত সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রায়শই সংবাদের শিরোনাম হয়। বিভিন্ন সময়ে অত্র প্রতিষ্টানে দুর্নীতি,অনিয়ম,স্বজনপ্রীতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়ে আসছে। এরি মধ্যে এবারে সংবাদের শিরোনাম এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এর বিরুদ্ধে। আদালতে ভূয়া তথ্য দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন।
এ ছাড়া তার দুর্নীতি,অনিয়ম,স্বজনপ্রীতি,স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষক,অভিভাবক,শিক্ষার্থীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।সংশ্লিষ্ঠ কয়েকজন ভূক্তভোগী শিক্ষক,অভিভাবক,শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গছে। এমনি অবস্থায় এসব গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে বহিস্কার করা হয়।
সূত্র জানায়, সাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধান ফরহাদ হোসেন ৬০ বছর হবার পরেও অবসরে না যাওয়ায় বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক জাকির হোসেন একজন অভিভাবকের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে অসত্য তথ্য দিয়ে রীট পিটিশন করেন (নং১৫২৭২/২০২২ )। পিটিশনে বলাহয় মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এ কোনও সহকারী প্রধান শিক্ষক নাই। ফলে সিনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব দিতে হবে। আদালতের নির্দেশে মা.উ.শি.অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জিয়াউল হায়দার হেনরি এডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে একটি পত্র দেন।
অথচ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ৬/৬/২০১১ তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক অবসরে গেলে/অসুস্থ হলে/ছুটিতে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দিতে হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও মা উ শি অধিদপ্তরের পত্র অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি এর উপস্থিতিতে এডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গত ১১/০৩/২০২৩ তারিখে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। মাননীয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী বিদ্যালয়ের ৬ ক্যাম্পাসের ১২ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিফট ইন চার্জ এর পরামর্শ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে স্কুল পরিচালনার নির্দেশনা দেন।
কিন্তু প্রশাসন পরিচালনায় অদক্ষ জাকির হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পরে তথাকথিত অভিভাবক ফোরাম, জামাত-বিএনপি পন্থী কতিপয় শিক্ষক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরোধী চক্র এবং কিছু অসাধু শিক্ষকের খপ্পরে পরে স্বেচ্ছাচারী নীতি গ্রহণ করেন। সূত্র জানায়, দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি এডহক ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে দুই জন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।
অথচ ১২/৪/২০১১ তারিখের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী পারেন না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন ছাড়াই তার ছেলে এবং অনুগত শিক্ষক -কর্মচারীদের মাধ্যমে ৪টি ফটোকপি মেশিন ক্রয়, প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদনকৃত সরবরাহকারী থাকা সত্বেও তাকে বাদ দিয়ে নিজেরা পরীক্ষার কাগজ ক্রয়,কোনও হিসাব ছাড়াই যাচাই বাছাইয়ের না করে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার পুরাতন আসবাবপত্র কম্পিউটার বিক্রি করে স্কুল ফান্ডে জমা দেন নাই, নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন দেয়া ৬টি ক্যাম্পাস ও ২টি হোস্টেল পরিস্কারের জন্য চুক্তি বদ্ধ ক্লিনিং কোম্পানির চুক্তি বাতিল করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনুগতরা প্যাড সর্বস্ব অভিজ্ঞতাহীন ঠিকানা বিহীন কোম্পানিকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এডহক ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন ছাড়া কাজ দিয়েছেন।
উল্লেখিত কোম্পানি ৪ মাস যাবৎ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কোন বেতন দিচ্ছে না। কোনও পরিস্কারের উপকরণ সরবরাহ করে নাই। অপরিস্কার থাকায় অভিভাবকবৃন্দ অভিযোগ দিচ্ছেন। জাকির হোসে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ প্রায় ১২০জন শিক্ষক-কর্মচারি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বদলী করেছেন। প্রতিষ্ঠানের একজন নিবেদিত প্রাণ পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন সিনিয়র সহকারী প্রধান শিক্ষককে অহেতুক তুচ্ছ সাজানো ঘটনায় ওএসডি করেছেন। যা ২৭/ ৮/১৯৭৫ তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী তিনি করতে পারেন না। শোনাযায় বদলি ও নিয়োগ বণিজ্য করে সহকারী শিক্ষক মোস্তফা আহমেদুল হক, খলিলুর রহমান নয়ন, আলমগীর জামিল, কাজী জাকির হোসেন (ইংলিশ ভার্সন) জায়েদী রাশেদ কাঞ্চন, মোস্তাফিজুর রহমান (আইটি ইঞ্জিনিয়ার) কুয়াকাটায় রিসোর্ট নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় করেছেন।
সূত্র জানায়,স্কুল শাখার ৪৪ জন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা গ্রহণ না করে ২০১৬ সাল থেকে স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হয়। সেই টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা এবং নতুন করে শিক্ষকদের এমপিও করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকদের নিকট থেকে জনপ্রতি ৭০ হাজার ও অন্যদের নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করেছেন। উল্লেখিত টাকা একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে তিনজন শিক্ষকের যৌথ হিসাব খুলে জমা করেছে। যা দিয়ে এমপিও চালুর জন্য উচ্চ আদালতে মামলার ব্যয় করা হবে। অবশিষ্ট টাকা কুয়াকাটার রিসর্টে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কাজে ব্যয় করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে গত সেপ্টেম্বর'২৩ মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন স্ট্রোক করে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। এখন বাসায় চিকিৎসাধীন।তিনি শয্যাশায়ী এবং কথা বলতে এবং ডান হাতে লিখতে পারেন না। এমতাবস্থায় এডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঢাকা জেলা প্রশাসক এর অনুমোদন ছাড়াই সিনিয়র শিক্ষক এবিএম আলী নূর রহমান অসুস্থ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এর টিপসই নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে সহকারী শিক্ষক নঈম ইবনে মো: জায়েদী রাশেদ কাঞ্চন ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নিজেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রশাসন) দাবি করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এর টিপসই দিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিদ্যালয়ের প্যাড ও নিজ নামের অননুমোদিত পদবি ব্যবহার করে একটি পত্র দেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিষয়টি অবগত হয়ে বিধি মাফিক প্রথমে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন উপপরিচালক, ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের একজন সিনিয়র সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আগামী মিটিংয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর পরিপত্র অনুযায়ী একজন সিনিয়র সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর চলতি দায়িত্ব দেয়া হবে বলে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য জাকিয়া শিল্পী জানিয়েছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: