বউ পেটানো সেই এসিল্যান্ডের পরকীয়ার শাস্তি 'তিরস্কার'

 মো. সারোয়ার সালামের সাথে পরকিয়া প্রেমিকা ব্যাচমেট নাসরীন চৌধুরী

ব্যাচমেটের সঙ্গে পরকীয়ায় মজে থাকা বউ পেটানো এক কর্মকর্তাকে ‘তিরস্কার’ শাস্তি দিয়েছে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়। তিনি প্রশাসন ক্যাডারের ৩৪তম বিসিএসএস কর্মকর্তা বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সাবেক এসিল্যান্ড সারোয়ার সালাম। বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন (নরসিংদী পৌরসভা) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি অথ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড দিয়েছে সরকার।

সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই শাস্তির কথা জানানো হয়।

এদিকে, লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কার দেওয়ায় ভুক্তভোগী স্ত্রী শাস্তি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে চলতি অক্টোবর মাসেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদন করেছেন সারোয়ার সালামের খাদিজা আক্তার। সেই চিঠিতে স্ত্রী উল্লেখ করেন, সারোয়ার সালামের অপরাধ ও অপকর্মের ফলে আমার জীবন প্রতিনিয়ত শ্মশানের চিতার মতো জ্বলছে এবং আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন।

স্ত্রীর ওই লিখিত আবেদনে আরও বলা হয়, একজন সরকারি কর্মকর্তার ঘরে সুস্থ স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত হওয়ার মতো ঘটনা জঘন্য অপরাধের শামিল। তাহলে এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়ে স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নানামুখী নির্যাতন ও সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শাস্তি কেন তিরস্কার হবে। এ ঘটনা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রচণ্ড আঘাতস্বরূপ। এভাবে যদি জঘন্য অপরাধ করার শাস্তি ‘তিরস্কার’ হয় তাহলে সমাজে নারী কেলেঙ্কারি ও নারী নির্যাতনকে আরও উৎসাহিত করবে। অন্যরাও এমন গর্হিত কাজ করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। এমতাবস্থায় অপরাধ ও অপকর্মের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি পুনর্বিবেচনা করার জন্য ভুক্তভোগী নারী জোর আবেদন জানিয়েছেন। খাদিজা  বলেন, ‘আমাকে ও আমার সন্তানকে অধিকারবঞ্চিত এবং মানসিক নির্যাতন করেছেন সালাম। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তদন্তে চারটি অভিযোগ প্রমাণ হয়েছিল। কিন্তু জনপ্রশাসনের তদন্তে প্রমাণ হয়েছে শুধু পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি। এটি খুবই দুঃখজনক যে, তদন্তে অন্য অপরাধের বিষয় আসেনি।’

এদিকে সরকার থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত থাকার সময় মৌলভিবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার একই ব্যাচমেট নারী এসিল্যান্ডের সঙ্গে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ দায়ের হয়। সেই সময় স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করতেন এমনকি স্ত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিতে চাপ দিতেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় মামলা রুজু করে কৈফিয়ত তলব করা হয় এবং একই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান কি-না তা জানতে চাওয়া হয়।

এতে বলা হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ৭ জুন লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করলে একই বছরের ৬ আগস্ট তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়।

 মো. সারোয়ার সালামের সাথে পরকিয়া প্রেমিকা ব্যাচমেট নাসরীন চৌধুরী

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যক্তিগত শুনানিঅন্তে প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় বিবেচনায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোগের সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপসচিব (সিআর-৩ শাখা) বেগম শেলিনা খানমকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এবং তদন্ত কর্মকর্তা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর ১৯ তারিখ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত কর্মকর্তা দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগের মধ্যে উভয়পক্ষের লিখিত স্বাক্ষ্য, জবানবন্দি, জেরায় ও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তা ফেনীতে কর্মরত থাকাকালীন বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও অপর একজন চাকরিজীবী নারীর সাথে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অপরাপর অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।

তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আনীত অভিযোগের একটি প্রমাণিত হওয়ায় এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগের সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তিনি দণ্ড পাওয়ার যোগ্য।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি অথ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আনীত অভিযোগের মাত্রা ও প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় বিবেচনায় দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে একই বিধিমালার ৪(২)(ক) বিধি অনুযায়ী ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড প্রদান করা হলে বলে উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে। একই সাথে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, এসিল্যান্ড সারোয়ার সালামকে কয়েক মাস আগে নরসিংদী পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হলে গত ২৪ মে সরোয়ার সালামকে পোস্টিং দেওয়া কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সারোয়ার আলমের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। যা গত বছরে ৩১ জানুয়ারি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নেন; যা এখনও বিচারাধীন। ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তিকে পোস্টিং দেওয়া আইনের পরিপন্থী।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top