রাষ্ট্রপতি পদে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার!

রাষ্ট্রপতি পদে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার!

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে ‘সর্বোচ্চ গোপনীয়’ নীতি অনুসরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজনীতিক, বিচারপতি না আমলা কাকে বেছে নেবেন তা নিয়েও দোটানায় রয়েছেন সরকারপ্রধান। গত মঙ্গলবার সংসদীয় সভার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, রাজনীতিক ব্যক্তির ওপরই ভরসা রাখতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

সর্বোচ্চ গোপনীয় নীতি প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতি পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মর্যাদাপূর্ণ এ চেয়ারের ব্যক্তিটি কে হচ্ছেন তা প্রকাশ পেয়ে গেলে কারণে, অকারণে সমালোচনামুখর হয়ে উঠবে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর সমালোচনা তেমন হবে না। যিনিই রাষ্ট্রপতি হন তাকে কম বিব্রত করতেই ‘গোপনীয়’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধায়ক নেতা বাংলা রিপোর্টকে বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে। তবে এখন অনেকটাই মনস্থির করে ফেলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক সূত্রে বলেন, শেষ বেলায় ছয়জনকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাতবারের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার রয়েছেন। ফিজার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এক্ষেত্রে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারেই অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা যায়।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মধ্যে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম আসে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

কে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার?

মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৫৩ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের নাম জামগ্রাম। বাবা মোবারক হোসেন এবং মা শাহেদা খাতুন। রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি “ফিজার” নামেই সমধিক পরিচিত।
 মোস্তাফিজুর রহমান ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং এগারো দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

তার দর্শন এবং উদ্দেশ্যের প্রতি গভীর দায়িত্বশীলতার কারণে, তিনি কৃতিত্বের সাথে সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং ফুলবাড়ি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মোস্তাফিজুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা (এফ.এফ) হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, এবং সেক্টর-৭ এর অধীনে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে লড়াই করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে তিনি দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের  সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর ১৯৭৩ সালে তিনি ফুলবাড়ি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭০ সালে কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ফুলবাড়ী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জি.এস ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ১৯৮৬ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একজন অত্যন্ত প্রবীণ এবং অক্লান্ত কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য হন এবং দলের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ফুলবাড়ি থানা আওয়ামী লীগ এর- সাংগঠনিক সম্পাদকও নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে তিনি দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের  সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে তিনি কাউন্সিলের মাধ্যমে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বগুণে তিনি পরপর তিনবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সালে কাউন্সিলে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং অদ্যাবধী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।

তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং সে কারণে ১৩ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে তাঁকে সেনা হেফাজতে নিয়ে একমাস আটক রাখা হয়।

গনতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য তাঁকে ১৯৯০ সালে জেলে প্রেরণ করা হয়। জনাব মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মত নির্বাচনী এলাকা ১০, দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ি- পার্বতীপুর) থেকে জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একাদিক্রমে আরও পাঁচবার (১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৩ এবং ২০১৮) তিনি মাননীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম এবং সাহসী নেতৃত্বের গুণে জনগণ তাঁকে পরপর সাতবার এই পদে নির্বাচিত করে। তিনি ২০০৯ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ও দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই ২০০৯ থেকে ২১ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৫ বছর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এবং ১০ বছর পাবলিক অ্যাকাউন্টস্‌ কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।

অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান জাতিসংঘের ৫৪তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, জার্মানী, ভারত, মালয়েশিয়া এবং ইউএসএ সহ বিভিন্ন দেশে কর্মশালা এবং সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৭৯ সালে রাজিনা রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ফারহানা রহমান এবং ফারজানা রহমান নামে দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top