পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

বিসিএস ক্যাডার হয়েই স্ত্রীকে ডিভোর্স

পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সাব্বির হোসেন

দীর্ঘ ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক। এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে। ছেলে ছিলেন বেকার। তবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মেয়ের পছন্দের ভালোবাসার মানুষের হাতেই মেয়েকে তুলে দেন বাবা সুলতান উদ্দিন আহমেদ। বেকার প্রেমিকের পড়াশোনার খরচও দিয়েছেন মেয়ে। তবে সে ভালোবাসা-বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। সরকারি চাকরি পেয়ে হঠাৎ বদলে যায় তার ভালোবাসার মানুষ। অতঃপর মেয়ের অমত সত্ত্বেও কুরিয়ারে পাঠানো হয় ডিভোর্সের চিঠি। তবে সে চিঠিও মেয়ে এবং তার পরিবার গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে গাজীপুরের জুডিশিয়াল আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির একটি মামলা করেছেন মেয়ে।

জানা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দুই পরিবারের সম্মতিতে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার মো. আলিমুজ্জামানের ছেলে মো. সাব্বির হোসেন এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার সুলতান উদ্দিন আহমেদের মেয়ে তানিয়া আক্তারের (ছদ্মনাম)।

এর আগে তানিয়াকে প্রাইভেট পড়াতেন মো. সাব্বির হোসেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘ ছয় বছর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকে। তবে সেসময় ছেলে কোনো চাকরি করতেন না। বেকার অবস্থাতেই দুই পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের প্রায় ছয় মাস পর একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি পান ছেলে। মেয়ের দাবি, এরপর থেকেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকেন সাব্বির। এরপর ৪৩তম বিসিএসের রিটেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আরও বদলে যান। এ সময় স্ত্রীকে ব্যঙ্গ করে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন। আর ৪৩তম বিসিএসে সাব্বির পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরই তানিয়ার দরজায় কুরিয়ারে পৌঁছায় ডিভোর্সের চিঠি।

সাব্বির ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)’ থেকে সিএসসি করেছেন। এরপর এমবিএ কমপ্লিট করেছেন ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি)’ থেকে। আর ভুক্তভোগী নারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করছেন। জানতে চাইলে তানিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, সাব্বির আমাকে একসময় প্রাইভেট পড়াত। এ সময় তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের ফ্যামিলিতে টানাপোড়েন ছিল। এ ছাড়া সে কোনো চাকরি করত না। ছয় বছরে সে প্রায়ই আমার কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিত। তার অনেক পরীক্ষার ফিও আমি দিয়েছি।

এরপর বিয়ের প্রায় ছয় মাস পর সে একটি চাকরি পায়। চাকরি পাওয়ার আগেও সে আমার কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই টাকা-পয়সা নিয়েছে। তবে সরকারি চাকরি পাওয়ার পরই পুরোপুরি বদলে যেতে থাকে সাব্বির। সে আমাকে ব্যঙ্গ করে অনেক কথাবার্তা বলত, অপমান করত। সে বলত যে, সে আমার থেকে অনেক বেটার ডিজার্ভ করে। সে এখন সরকারি চাকরি করে। এ ছাড়া সাব্বিরের বাবাও মাঝেমধ্যে বলত যে, তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করান।

তার ছেলে আমার থেকে বেটার ডিজার্ভ করে। সাব্বির এসব বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যেই তাকে মারধরও করত বলেও দাবি করে তানিয়া বলেন, এসব বিষয়ে সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা ভ্রুক্ষেপ না করে বলতেন—‘অ্যাডজাস্ট’ করে নাও। এদিকে প্রেমের বিয়ে হওয়ায় আমি আমার পরিবারকেও কিছু বলতে পারতাম না।

এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি গাজীপুর জুডিশিয়াল কোর্টে একটি যৌতুক মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী। সিআর মামলা নং-৩২/২০২৪। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিয়ের সময় সাব্বির ও তার পরিবার মেয়েপক্ষের কাছে যৌতুক দাবি করেন। এ সময় তারা যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তী সময়ে উপস্থিত লোকজনের মধ্যস্থতায় যৌতুক ছাড়াই বিয়ে সম্পন্ন হয়। তবে বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে যৌতুক দাবি করে তানিয়াকে মারধর করত সাব্বির।

তিন দিনের চেষ্টায় পাওয়া যায় অভিযুক্ত সাব্বির হোসেনকে। জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, আপনি যা অভিযোগ পেয়েছেন, আপনার যা মন চায় করেন। এসব বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

সাব্বিরের বড় ভাই শাহেদুর রহমানের তিনটি নম্বরে ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর তার বাবা মো. আলিমুজ্জামানের নম্বরে ফোন দিলে তিনি বলেন, দুই পরিবারের সম্মতিতেই ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে। মেয়েপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরে তারা ডিভোর্স চাওয়ায় ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে। আলোচনার কথা অস্বীকার করেছেন মেয়ের বাবা সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো কথাই তারা বলেননি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি সম্ভব হয়নি। আমি ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। বক্তব্যের বিষয়ে জানতে পুনরায় গত দুই দিন ধরে সাব্বিরের বাবাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top