নড়াইলে ছাত্রদল কর্মীর ইভটিজিং-ছিনতাই, থানায় অভিযোগ

অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী মিনহাজ

নড়াইলে এক স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিং ও মারধর করে গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদল কর্মী মিনহাজের (২০) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) নড়াইল সদর থানা সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জানা গেছে, অভিযুক্ত মিনহাজ নড়াইল পৌরসভার দূর্গাপুরের গোচর এলাকার মৃত শাকিলের ছেলে। তিনি নড়াইল জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও শাহাবাদ মাজিদিয়া কামিল মাদরাসা শাখা ছাত্রদলের সভাপতি এস এম আশিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। আশিকুল ইসলাম নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলামের রাজনৈতিক গ্রুপের নেতা।

ছাত্রদল কর্মী মিনহাজের বিরুদ্ধে থানায় হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মিনহাজ পূর্ব পরিচয়ের জেরে বেশ কিছুদিন আগে ভুক্তভোগী মেয়ের নিকট থেকে দুই কিস্তিতে মোট ৬ হাজার টাকা ধার নেয়। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী সেই টাকা কয়েকদিন যাবত ফেরত চাইলে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকাল আনুমানিক সাড়ে চারটার দিকে নড়াইল শহরের আব্দুল হাই সিটি স্কুল এলাকা থেকে প্রাইভেট পড়ে বাড়িতে ফেরার সময় ফাঁকা স্থানে ডেকে নিয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ও মিনহাজ তার পা দিয়ে ভুক্তভোগীকে অন্তত ১০ মিনিট সেখানে চাপা দিয়ে ধরে রাখে এবং শারীরিক নির্যাতন করে। পূর্ব থেকেই ওই নির্জন স্থানে অভিযুক্ত মিনহাজের সাথে আশিক (২২) নামে একটি ছেলে ছিল। পাড়া দিয়ে ধরে রাখার পরে ভুক্তভোগীকে উপরে তুলে তার গলায় থাকা ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের আট আনা ওজনের স্বর্ণের চেইনটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে ভিকটিমকে সেখানে ফেলে রেখে অভিযুক্তরা চলে যায়।

এদিকে ঘটনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী মিনহাজ এর আগেও পৌরসভার ঘোড়াখালী এলাকার একটি মেয়েকে উত্যক্ত করতে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, মিনহাজ একজন পেশাদার ইভটিজিংকারী। নিজের গুরু ছাত্রদল নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। তার দাপটে এলাকার অনেক মেয়ে ভুক্তভোগী হয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় আতঙ্কিত থাকেন। এ বিষয়ে ছাত্রদলের নেতাদের নিকট অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনা বলে দাবি স্থানীয়দের।

বৃহস্পতিবার ইভটিজিং, মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী বলেন, এই মিনহাজ দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে আমাকে উত্যক্ত করত। একপর্যায়ে আমার হাত-পা ধরে প্রেমে রাজি হওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। তবে তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক না হলেও কথাবার্তা হতো৷ এর সুবাদে সে আমার থেকে দুই কিস্তিতে ছয় হাজার টাকা ধার নেয়। ধারের টাকা ফেরত চাইকে আমাকে মারধর করে গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা বলেন, এই মিনহাজের যন্ত্রণায় আমি কয়েকবার তার অভিভাবকের নিকট নালিশ করেছি। কোনো লাভ হয়নি৷ আজ আমরা আমাদের সন্তান-সম্ভ্রম নিয়ে এলাকায় টিকতে পারছিনা। আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তাদের রাজনৈতিক শক্তি আছে। আমরা পুলিশের কাছে এই ঘটনার বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী মিনহাজকে ফোন করা হলে "এটি মিথ্যা মামলা" বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে নড়াইল সদর থানার উপপরিদর্শক নয়ন বিশ্বাস বলেন, ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top